অসম বয়েসী প্রেমের লিবারেল আর্টস । জশ র্যাডনোর
কিছু ফিল্ম থাকে না, দেখার সময়টা অনেকটা মেডিটেশনের মতো কাটে। কেমন জানি সুদিং একটা ভাইব থাকে। কোনো সার্টেন একটা বিষয়ে গভীর ভাবে ভাবতে বাধ্য করে। বিভিন্ন পার্স্পেক্টিভ থেকে ভিন্ন রকমের অপিনিয়ন্স, মোরাল পয়েন্টস-এথিক্স নিয়ে বিভিন্ন চিন্তা মনের অজান্তেই নিজে নিজে মস্তিষ্কে খেলা করতে থাকে। আমার কাছে ‘লিবারেল আর্টস’ ঠিক সেরকম। এর মাঝে সময় করে ঠিক দু’বার দেখে নেয়া হয়ে গেছে। শেষ কবে কোনো ফিল্ম দেখে এরকম ভালো লাগা কাজ করেছে, ঠিক মনে করতে পারছি না। এর সিনোপসিস নিয়ে বললে আহামরি কিছু মনে হবে না। খুবই সাদামাটা। বেশ কিছু সাব-প্লটের আভাসও মিলবে পুরো ফিল্মে। যদিও তা মূল গল্পের প্রভাবে গৌণ হয়ে যায়। আপাত দৃষ্টিতে দেখলে ওরকম নোটেবল কিছু মনে হবে না। খুবই প্রেডিক্টেবল স্টোরিলাইন। লেটারবক্স রেটিংও এভারেজ। আমার এরকম আকাশ ছোঁয়া ভালো লাগার কারণ নিজেও জানি না।
এখানে ‘মূল গল্পের মূল চরিত্র’ জেসি ফিশার। পেশায় কলেজ এডমিশন কাউন্সেলর। নিউইয়র্ক থাকে। দেখে মনে হবে একঘেয়ে ম্যাটেরিয়েলেস্টিক জীবন নিয়ে বেশ হতাশ একজন মানুষ। যার প্রধান কাজ সারাদিন বই পড়া। একদিন তার আলমা ম্যাটার – কলেজ থেকে ডাক আসে প্রিয় প্রফেসর পিটার হলবারগ্-এর রিটায়ারমেন্ট সেরিমনি টাইপ কিছুর জন্য। যা হয় আরকি, জেসি ও’র কলেজ ওহায়ও যায়, স্বাভাবিক ভাবেই নিজের কলেজ ডে’স-র কথা মনে করে নস্টালজিয়ায় ভুগতে থাকে। ওখানে জেসির পরিচয় হয় জিবির সাথে। বয়সের তফাত এক যুগের বেশি হওয়া স্বত্তেও দু’জনের মাঝে সখ্যতা গড়ে উঠে। তাদের কথা হতো জীবনবোধ, ক্লাসিক্যাল মিউজিক, সাহিত্যসহ আরো নানান বিষয়ে। একসময় জেসি নিউইয়র্ক ফিরে আসে, তবে চিঠিযোগে ওদের কথা চলতেই থাকে। আস্তে আস্তে দু’জনেই বুঝতে পারে যে তাদের সম্পর্ক শুধু বন্ধুত্বের না। তাদের মাঝে প্রণয়ের সৃষ্টি হয়। সব ঠিকঠাক-ই চলছিলো। জিবি নিউইয়র্ক আসে। তারা কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে থাকে। একটা সময় আসে যখন তাদের মাঝে এইজ গ্যাপের কারণে জেসির এই সম্পর্কে জড়িয়ে যাবার ব্যপারটাকে মোরালি ঠিক লাগছিলো না। আনইথিক্যাল লাগছিলো। ব্যপারটা স্টেরিওটাইপ থেকেও বড়ো কিছু মনে হয় তার। জেসির এরকম ভাবনা জিবির ভালো লাগেনি মোটেই। স্বাভাবিক ভাবেই ওদের সম্পর্কে কমপ্লিসিটি বা ক্রাইসিসের দেখা দেয়। শেষমেশ কী হয় – এই প্রশ্নকে সামনে রেখেই আবর্তিত হয়েছে পুরো গল্প।
এই গেলো মূল স্টোরিলাইন। পুরো ফিল্ম জুড়ে জুডিথ ফ্যায়ারফিল্ড, ন্যাট ডিনসহ বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং চরিত্রের দেখা মিলবে। যাদের নিজেদেরও ইন্ডিভিজুয়াল্লি বিভিন্ন টানা পোড়নের বা কমিক গল্প আছে। প্রয়োজনের বাইরে বাড়তি কোনো চরিত্র এসছে বলে মনে হয়নি। গল্পটা বলবার জন্যে মোটামুটি সব গুলো চরিত্রকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বেশ কিছু চরিত্রের স্ক্রিন টাইম কম মনে হলেও সবার অভিনয় টপ নচ ছিলো। স্পেশাল মেনশন টু ইটস ডিরেক্টার, লিড ক্যারেক্টার জেসি, তথা জশ র্যাড্নোর (আমাদের টেড)। লোকটা আমার বেশ প্রিয় একজন অ্যাক্টর। এবার ফিল্ম ডিরেকশনেও কেমন তা দেখে নিলাম। একসাথে এতো দায়িত্বের ভার বেশ ভালো ভাবেই উৎরে গিয়েছেন।
তো এই ছিলো গল্প এবং গল্পের চরিত্ররা। সবমিলিয়ে একটা ‘ভালো ফিল্ম’। অভিয়াস্লি রেকমেন্ডেড। ক্যামেরার কাজ, লোকেশান্স থেকে শুরু করে সব ছিলো বেশ বেশ চমৎকার। ইভেন আমিতো ভেবে রাখছি যে যেই কলেজে শ্যুট হয়েছে আমার কলেজ ইন্টেকে ওখানে এপ্লাই করবো। যেটা আবার আসলেই জশ র্যাড্নোরের আলমা ম্যাটার। টেকনিক্যাল এস্পেক্ট নিয়ে বললে স্পেশাল মেনশন টু মিউজিক এরেঞ্জমেন্ট এন্ড প্লেসিং। পুরো ফিল্মজুড়ে সুদিং আবহ সৃষ্টি করবার কাজটা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বেশ ভালো ভাবেই করেছে। লেখাটা পড়ে মনে হতে পারে যে আমি জশ র্যাডনোর তথা ভেরি অউন্ড টেড মসবি-র প্রতি বায়াসড ছিলাম। ওঅয়েল…আ’ম আই গেস। টেড মসবির প্রভাব আমার জীবনে বেশ বড়ো পরিসরেই লক্ষণীয়। কিন্তু আসলেই লিবারেল আর্টস চমৎকার একটা কাজ।
১৭ সেপ্টেম্বার – ২০২৩
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন