দুই দিনের দুনিয়া । চরকি

 চরকিতে নতুন কনটেন্ট এসেছে। অনম বিশ্বাসের ওয়েব ফিল্ম ‘দুই দিনের দুনিয়া’। শ্রেষ্ঠাংশে রয়েছেন এসময়ের জনপ্রিয় দুই অভিনয়শিল্পী— চঞ্চল চৌধুরী এবং ফজলুর রহমান বাবু। কী দারুণ লাইনআপ! দর্শকদের মাঝে এ কাজটি নিয়ে আগ্রহী করানোর জন্য এই লাইনআপ-ই যথেষ্ট। এবং হয়েছেও তা-ই। যেদিন চরকিতে থেকে ‘দুই দিনের দুনিয়া’ নিয়ে ঘোষনা এলো, সেদিন থেকেই বিভিন্ন কম্যিউনিটিতে দর্শকদের মাঝে বেশ আলোচনা-সমালোচনা দেখতে পারছিলাম। এর পেছনে যথেষ্ট কারণও আছে।

বিগত কিছু বছর ধরেই দেখছি ‘আয়নাবাজি’ সিনেমা লেখা, হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় ‘দেবী’ উপন্যাসেকে চলচ্চিত্রে রূপায়ণ করা সহ আরো বেশকিছু কাজ দিয়ে দর্শকদের মনে বেশ খানিকটা জায়গা করে নিয়েছেন অনম বিশ্বাস। এবং সেই সাথে বাংলাদেশের প্রথম সারির ক’জন নির্মাতার তালিকায় নিজের নামও উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন তিনি। যদিও ‘দেবী’ তে হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলি ঠিক ছিলো বলে, মনে হয় না। তিনি নিজের কল্পনা থেকে মিসির আলিকে রুপদান করেছেন। এ জিনিসটা দর্শকদের একটু হতাশ করলেও তার স্টোরি টেলিং স্টাইল, মেকিং—দর্শকদের বেশ মুগ্ধ করেছিলো। 

আর বাকি দু’জন অভিনেতার কথা আর কী বলবো! তাঁদের বেশিরভাগ কাজ-ই বেশ দর্শকনন্দিত। তাঁদের নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। বাংলাদেশের সেরা ১০ টি চলচ্চিত্রের কথা উঠে আসলে, তাঁদের অভিনীত একাধিক চলচ্চিত্র এ লিস্টে আসতে বাধ্য। তাঁদের নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেক কিছুই বলা যায়। আপাতত ‘দুই দিনের দুনিয়া’ নিয়েই বলি। কেমন ছিল অনম বিশ্বাসের ‘দুইদিনের দুনিয়া’ ?

এ গল্পে চঞ্চল চৌধুরী একজন ট্রাক ড্রাইভার। সামাদ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। আর মিস্ট্রিম্যান জামসেদ চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাবু। যিনি দাবি করছেন যে তিনি নাকি ভবিষ্যৎ থেকে এসেছেন। তিনি বলছেন, সামাদ নাকি দু’দিন পর ভয়ংকর বিপদের পড়বে। যদি সামাদ তার কথা শুনে, তাহলে এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। কিন্তু সামাদ সেই জামসেদের কথা উপেক্ষা করে গেলেন। এবং যা হবার তা-ই হলো, রহস্যজনকভাবে একের পর এক বিপদে পড়তে শুরু করলো সামাদ। এইভাবেই গল্প আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়েছে। 

এই গল্পে দু’জন অভিনেতা-ই বেশ অভিজ্ঞ। পুরো ওয়েব ফিল্ম জুড়ে দাপিয়ে অভিনয় করেছেন তাঁরা। তাদের  অভিনয় নিয়ে খুব একটা অভিযোগ করার সুযোগ দেখছি না। চঞ্চল চৌধুরী যেনো সাক্ষাৎ ট্রাক ড্রাইভার-ই বনে গিয়েছিলেন। গল্পের সাথে একেবারে মিশে গিয়েছেন যেনো। আর বাবুর কথা যদি বলি, একই ওয়েব ফিল্মে আমার মস্তিষ্ক তাকে একেক সময় একেক ধরনের মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করেছে। কখনো মনে হয়েছে তিনি আধ্যাত্মিক কেউ, কখনো সাধারণ মানুষ, কখনো খলনায়ক—গল্পের প্রয়োজনে দারুণ কাজ করেছেন তিনি। সেই সাথে তাল মিলিয়ে চঞ্চল চৌধুরীও বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। গল্পের প্রয়োজনে যা প্রয়োজন তা-ই করেছেন তাঁরা। তবে দুই চরিত্র নির্ভর কনটেন্ট হওয়ার ব্যাপারটা আমার একটু খারাপ লেগেছে। ফ্রেমে বেশিরভাগ সময় এই দু’জন-ছিলো। যার কারণে বাকি চরিত্রগুলো কেমন যেনো ম্লান হয়ে গিয়েছিলো। তানভিন সুইটির অভিনয়ও বেশ লেগেছে। আরেকটু ফ্রেম পেলে ভালো হতো। বাদবাকি সব মোটামুটি ন্যাচারাল-ই লেগেছে। তানিয়া বৃষ্টির অভিনয়টা আরেকটু বেটার হতে পারতো। অতোটাও ভালো লাগেনি। তাঁর উন্নতির স্পেস রয়েছে অনেক। 

আর মেকিং-এর কথা যদি বলি, অভিযোগ করার মতো কিছু পড়েনি চোখে। সবকিছু বেশ উপভোগ্য ছিলো। অনম বিশ্বাস তাঁর সেরাটা-ই দিয়েছেন, বলে মনে হয়েছে। শুটিং স্পট, কালার গ্রেডিং, সিনেমাটোগ্রাফি, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক—সবকিছুই বেশ ভালো লেগছে। তবে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা আমার নজর কেড়েছে, সেটি হলো চিত্রনাট্য। অনেক উপভোগ করেছি এই জিনিসটা। এটা নিয়ে অভিযোগের কোনো প্রশ্ন-ই আসে না। অনম বিশ্বাসের নেতৃত্বে পুরো টিম দারুণ কাজ করেছে। শেষ পর্যন্ত সাসপেন্সে ডুবিয়ে রাখার জন্য এনাফ। তবে গল্প আরেকটু ভালো হতে পারতো। গল্পটা ঠিক জমেনি আমার কাছে। শেষ দিকে কী যেনো নেই মনে হলো। বেশ প্রেডিক্টেবল গল্প ছিলো। মেকিং ভালো হওয়াও পুরোটা দেখতে বাধ্য করেছে।

সব মিলিয়ে ‘দুই দিনের দুনিয়া’ এভারেজ একটি কাজ ছিলো। গল্পটা আরেকটু শক্তিশালী হতে পারতো। তবে মেকিং-এর কারণে পুরোটা সময় উপভোগ করেছি। এ ফিল্মের সবচেয়ে দুর্বল দিক লেগেছে গল্প এবং সবচেয়ে শক্তিশালী দিকের কথা বললে বলতে হবে চিত্রনাট্য এবং সিনেমাটোগ্রাফির কথা। রেকমেন্ড করার মতো কাজ। অনম বিশ্বাস থেকে আরো ভালো ভালো কাজ আশা করা-ই যায়।

Dui Diner Dunia | Chorki | Anam Biswas

মন্তব্যসমূহ